প্রকাশ: ৯ মে, ২০২১ ১০:৪০ পূর্বাহ্ন
একটা গল্প পড়া যাক
১।
এক লোক ঘর থেকে বের হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলো। ধন্যবাদ দিতে দিতেই সে ধরাম করে ল্যাম্পপোস্টের সাথে বাড়ি খেলো। ফুলে যাওয়া কপালে হাত বুলাতে বুলাতে সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, ঈশ্বর, আমাকে এভাবে শাস্তি দিলে?
আরেকটু এগুতেই কোত্থেকে এক গরু এসে তাকে দিলো এক গুতা। কোমড়ে ব্যথা পেয়ে সে কেঁদে বললো, ঈশ্বর, কেন আমাকে এভাবে পানিশমেন্ট দিচ্ছ? চোখ মুছে সে যেই না এগুবে, অমনি সোজা গিয়ে পড়লো এক ম্যানহোলে!
এবার তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলো। বেডে শুয়ে শুয়ে সে অঝোরে কাঁদতে লাগলো আর বললো, ঈশ্বর কেন আমাকে তুমি বারবার শাস্তি দিচ্ছ? কেন কেন কেন?
এইবার হঠাৎ আকাশ থেকে বানী শোনা গেলোঃ
" ওরে বেকুব, বারবার আমার সাথে কনভারসেশন চালানোর জন্যে আকাশের দিকে না তাকিয়ে একটু রাস্তায় দিকে তাকিয়ে হাঁটলেই বুঝতি এটা আমার শাস্তি না তোর নিজের গাধামি!"
২।
এই গল্পটা মনে পড়লো বাংলাদেশ আর ভারতের কোভিড সিচুয়েশন দেখে। ভারতে মার্চের মাঝামাঝি থেকেই মৃত্যুর হার বাড়ছিল। তারপরও তারা ইলেকশন আয়োজন করেছে, যেখানে হাজার হাজার লোক ডজন খানেক সেলিব্রিটির পেছন পেছন মিছিল করে 'জনসংযোগ' করেছে, প্রধানমন্ত্রী মোদি আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ তাদের প্রশাসনিক রেসপনসেবলিটি গাছে তুলে নির্বাচনী প্রচার করে বেড়িয়েছে। তৃনমুল কংগ্রেস ইলেকশন পেছানোর আবেদন করে ইসিতে, যে আবেদন রিজেক্ট হয়। দৈনিক যখন তিন হাজার লোক মারা যাচ্ছে করোনায়, ভারতের একাধিক রাজ্যে তখন মহাসমারোহে নির্বাচন হচ্ছে।
৩।
এবং কুম্ভমেলা! মহামারির মধ্যে এপ্রিল ১ থেকে ৩০ এর এই মহাযজ্ঞে ৭০ লাখ লোক যোগ দেয়! ৭০ লাখ লোক পুণ্যের আশায় নদীতে নেমে স্নান করছে, অস্থায়ী ঘরে থাকছে, ছোট একটা শহরে ঘুরছে, নাগা সাধুদের প্রণাম করছে! স্বাভাবিক সময়েই তো এখান থেকে কিছু না কিছু রোগ ছড়িয়ে পড়ার কথা!
৪।
বাংলাদেশে এখনো ভারতের মত রাস্তায়, মাঠে মানুষ মরে পড়ে নাই। এই আনন্দে বাংলার মানুষ আত্মহারা হয়ে শপিং করে বেড়াচ্ছে। রাস্তায় যত্রতত্র মানুষের ভীড়ের ছবি দেখে একদল আবার পোভার্টি প্লি করছে। Poverty Plea হলো এই যুক্তিটা দেখানোঃ সরকার যেহেতু গরিবদের কোন প্রকার আর্থিক সাহায্য করতে পারে নাই, তাহলে গরিবরা তো রাস্তায় আসবেই। লক ডাউন তো ক্ষুধা মানবে না।
যুক্তিটার সাথে সম্পুর্ন একমত। কিন্তু ঝামেলা হলো ইফতারের দোকানের সামনে, শপিং মলে, মার্কেটে, বাজারে এই যে লোকগুলো ভীড় করে পাগলের মত শপিং করছে, মামা হালিম আর চিকন জিলাপী কিনছে, বাইকে মাস্ক ছাড়াই তিন বাচ্চা আর বউকে নিয়ে হাতির ঝিলে ঘুরছে, এদের ক্ষেত্রে কি এই পোভার্টি প্লি খাটে? এরা গরিব বলে তিন নম্বর জামা, স্পেশাল হালিম আর ঝিল বোট সার্ভিসের লাইনে দাঁড়িয়ে আছে?
৫।
চাদপুরের হাজিগঞ্জে জুমাতুল বিদা'র নামায আদায় হয় গত শুক্রবার। প্রশাসন থেকে বলা হয়েছিলো আয়োজন যেন স্বাস্থ্য বিধি মেনে করা হয়। নামায শেষে দেখা গেলো এক লাখের বেশী মানুষ জামাতে অংশ নিয়েছে, মসজিদের বাইরে রাস্তায়, ফুটপাতে সব স্থানেই মুসল্লিরা দাড়িয়েছেন। এই ঈদের নামাযেও একই ঘটনা ঘটবে। প্রশাসন মৃদু সুরে বলবে স্বাস্থ্যবিধির কথা, আমরা এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দেবো।
৬।
তবে আরেকটা মিলও আছে। ৭০ লাখের কুম্ভমেলাতেও করোনা থেকে মুক্তির জন্যে প্রার্থনা করা হয়েছিলো। ৭০ লাখ মানুষের প্রার্থনার পরেও ভারতে গত ৮ মে একদিনে মারা গেছে ৪১৮৭ জন মানুষ।
আমাদের জুমাতুল বিদার নামাযেও করোনা থেকে মুক্তির জন্যে দোয়া করা হয়েছে। লক্ষাধিক লোকের দোয়ার পরেও প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যের সংখ্যা বাড়ছে।
এখন এই ৭০ লাখ ও ১ লাখ ধর্মপ্রাণ মানুষগুলো কি আকাশের দিকে তাকিয়ে কেঁদে কেঁদে বলবে, ঈশ্বর কেন আমাদের তুমি বারবার শাস্তি দিচ্ছ? কেন কেন কেন?
নাকি নিচের দিকে তাকিয়ে নিজেদের গাধামি গুলোও দেখবে?
করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট কিন্তু পৌছে গেছে দেশে!
ফারাবী
৮ মে, ২০২১